সদ্য সংবাদ ডেস্কঃ
সোনারগাঁয়ের ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়া মানেই যেন আলাদিনের চেরাগ পাওয়া। নইলে অনিশ্চিৎ এই প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে কেহ কোটি টাকা বাজী ধরে না। অবৈধ অর্থের দৌরাত্ম্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান পদে বসছেন এখন বিতর্কৃত মেম্বাররা। আর এই অনৈতিক কাজে তাদের সহায়তা করছে স্থানীয় বিএনপির এক নেতা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় এতোদিন যারা প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন,সেইসব নিরপেক্ষ জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে,কোন রকমের নিয়মের তোয়াক্কা না করে অসৎ উদ্দেশ্যে দরদামের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের মতো অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত মেম্বারদের নাম ইউএনও'র কাছে প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র।
সর্বশেষ,বুধবার সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এর জন্য ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেম্বার নুরুল হক টিক্কা খান ওরফে টিক্কা কসাই এর নাম প্রস্তাব করা হয়। তিনি এর আগে ভোট ছাড়াই মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হন। পালাতক চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ ও তার বড় ভাই আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর এর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন টিক্কা খান। এমনকি জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গেও রাজনীতি করেছেন টিক্কা খান। মোটা অংকের অর্থ লেনদেনে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হাত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সনমান্দী ইউনিয়ন এর প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের কাউকে টাকা দিয়ে,আবার কাউকে হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের থেকে জোড়পূর্বক সমর্থন নিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন তিনি। এর আগে শম্ভুপুরা ইউনিয়নে সাবেদ আলী মেম্বার,মোগরাপাড়া ইউনিয়নের জনপ্রিয় সিপন মেম্বারকে বাদ দিয়ে নুরুল হক মেম্বার ও কাঁচপুর ইউনিয়নের সাহালম মেম্বার বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিএনপির উপজেলা নেতাকে ম্যানেজের মাধ্যমে নাম প্রস্তাব পাঠান বলে শোনা যায়। একই অভিযোগ রয়েছে উপজেলার পিরোজপুর ও বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। অর্থের বিনিময়ে বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে প্যানেল চেয়ারম্যান এর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছেন মেম্বাররা। বৈশ্বম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে সরকার পতন হলেও এখানে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনে বৈশ্বম্যের কোটায় বাদ পড়েছেন জনগণের জন্য নিবেদিত নির্দলীয় এবং জনসমর্থিত মেম্বাররা। পিরোজপুর ইউনিযনে জনপ্রিয় মেম্বার আফজাল হোসেনকে বাদ দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুল মান্নান এর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। যা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নেও প্যানেল চেয়ারম্যান পদে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মামুন মেম্বার'র নাম। অভিযোগ রয়েছে,এসব ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের নাম সুপারিশ করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সাদীপুর ইউনিয়ন থেকে হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লা মেম্বার (জামায়াত সমর্থক) ও আবু কালাম মেম্বার তাদের নিজনিজ নামে প্রস্তাব পাঠালেও এখানে কাজ করেছে বিপুল অর্থের বিনিময়। এলাকাবেধে লেনদেনের পরিমান ১০,২০,৫০লক্ষ ও শেষে কোটিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে স্থানীয়রা বলে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেছেন,ছাত্র-জনতার আত্মদানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা,বিএনপির কিছু নেতাদের এমন কর্ম দেখবো এই জন্য নয়।
এব্যাপারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন,যা ঘটতেছে তা খুবই লজ্জাজনক। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র। মোটা অংকের টাকা লেনদেনের যেমন অভিযোগ পাচ্ছি তেমনি জোরপূর্বক মেম্বারদের থেকে সই আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাচ্ছি। সরকারকে বলবো তারা যেন যাচাই-বাছাই করে এ সকল পদে নিয়োগ দেয়।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল বলেন,এটাও একটা ফ্যাসিস্ট আচরণ। যারা আগেই ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়েছিলো এখনো টাকার বিনিময়ে তারাই যদি নির্বাচিত হয়,তাহলে জনগণের চাওয়ার শক্তি সততা ও বিশ্বাসের জায়গাটায় প্রশ্ন থেকে যায়।
এটা খুবই নিন্দনীয় ব্যাপার। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি অপকর্ম করে তাদের বিষয়ে আমরা হাইকমান্ডকে জানাবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন,স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই ইউএনও'র কাছে প্যানেল চেয়ারম্যানের জন্য নাম প্রস্তাব করেছি। তাছাড়া এই সকল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হওয়ার মতো বিএনপিতে আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায়নি। যাদেরকে যোগ্য পাওয়া গেছে এবং সবাই যাকে সম্মতি দিয়েছে তার নামই প্রস্তাব করা হয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা বলেন, সাধারণত প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই আগেই প্যানেল নির্বাচন হয়ে থাকে। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেই প্যানেল থেকেই একজন দায়িত্ব পালন করবে। তবে তাদের ব্যাপারে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আপত্তি থাকে তাহলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই ভিত্তিতে আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নাম প্রস্তাব করেছি। এখানে দলীয় বিবেচনায় নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
এসএস/বি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
No comments:
Post a Comment