গত ১ আগস্ট পালিত হয় মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের ২য় বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদ উল আযহা। তবে এদিন রাতেই নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলিতে চড় মারার প্রতিশোধ নিতে শুভ (৩০) নামে এক প্রবাসী যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুবৃত্তরা।নিহত শুভ পাঠানটুলি এলাকার বশির মিয়ার ছেলে। প্রায় এক বছর আগে ছুটি নিয়ে ব্রুনাই থেকে দেশে এসেছিলেন তিনি। স্থানীয়রা জানায়, ঈদের দিন এক যুবকের সাথে শুভর কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে যুবককে চড় মারেন শুভ। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্ধুদের নিয়ে পাঠানটুলি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শুভকে কুপিয়ে জখম করেন ওই যুবক। গুরুতর আহত অবস্থায় শুভকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
একই দিন বন্দরে পুকুরের পানিতে ডুবে রিয়াদ (৬) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। ঈদের দিন সকাল ১১টায় বন্দরের মদনগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশু রিয়াদ মদনগঞ্জ এলাকার রোমান মিয়ার ছেলে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে গরু কোরবানি দেখতে এসে রিয়াদের পায়ে রক্ত লাগে। সে সহ তার দুই শিশু বন্ধু কবরস্থান পুকুর ঘাটে পা পরিষ্কার করতে যায়। হঠাৎ পা পিছলে মুহূর্তেই পুকুরের পানিতে ডুবে তলিয়ে যায়। পরে তাকে খোজাখুজি করে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।ঈদের রাতেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রিফাত হাসান (২২) নামে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক তরুণকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়েছে। নিহত রিফাত দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার রূপগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলামের ছেলে।সাংবাদিক নজরুল ইসলাম জানান, গত ৩১ আগস্ট দিবাগত রাতে তার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় রিফাত ভূইয়া নামে আরেক তরুণ। রিফাত ভূইয়া তার ছেলের বন্ধু হওয়াতে যেতে বাধা দেননি তিনি। ওই রাতেই রিফাত ভূইয়া ও তার সহযোগীরা নজরুল ইসলামের ছেলে রিফাত হাসানকে মারধর করে। মারধরের পর তারাব পৌরসভার বরপা সুতালড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ফেলে রাখে। ঈদের দিন সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিফাত হাসান।৩ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহর স্ত্রী শামীমা আক্তার (৩৩) আত্মহত্যা করেন। পরকীয়া প্রেমের জের ধরে শরীরে আগুন ধরিয়ে দিলে শামীমা আক্তারকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সোমবার ভোরে তিনি মারা যান। নিহত শামীমা আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারী হাবিবুর রহমান হাবুর বোন। অভিযুক্ত মোহাম্মদ উল্লায় উপজেলার শিবপুর থানার হালিম মোক্তারের ছেলে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগেও একাধিকবার পরকীয়া করায় মোহাম্মদ উল্লাহকে সতর্ক করেছিল শামীমা। এর আগেও ৩ বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে স্বামীকে এ পথ থেকে ফেরাতে চায় শামীমা। সর্বশেষ ঈদের আগে ২৬ তারিখ রাতে সে স্বামীকে মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী রোজিনার ঘর থেকে পরকীয়া অবস্থা থেকে ধরে নিয়ে আসে। পরে স্বামীর সাথে এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাতে সে শরীরে দুইবার আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানের ডাক্তাররা জানায় তার দেহের ৪০ শতাংশ পুরোই পুড়ে গিয়েছে। সোমবার ভোরে সে মারা যায়।৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ সংলগ্ন পুকুর থেকে সিএনজিসহ আব্দুল্লাহ (২০) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুপুরে শহরের মাসদাইর এলাকায় ওই পুকুর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে হত্যার পর তাকে সিএনজিসহ পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল। নিহত আব্দুল্লাহ একই এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে।নিহতের বাবা হানিফ জানান, মঙ্গলবার বিকালে আব্দুল্লাহ এলাকার কয়েকজন ছেলের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। পরে তিনি ছেলেকে চড় থাপ্পড় দিয়ে শাসন করেন। এরপর সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বুধবার ভোরে আমার মোবাইলে একজন সিএনজি ড্রাইভার ফোন করে বলেন আপনার ছেলে গুলিস্তানে আছে। তার কাছে সিএনজি ভাড়া নেই। আমি তখন তাকে বলি ওকে নিয়ে চাষাঢ়ায় এসে আমাকে ফোন দাও। আমি ভাড়া পরিশোধ করবো। এরপর আর কোনো ফোন পাইনি। দুপুরে তার লাশ পেলাম।
একই দিন ফতুল্লায় নিখোঁজের ২ দিন পর পুকুর থেকে কবির হোসেন (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে গত ৩ আগষ্ট থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। মৃত কবির হোসেন কায়েমপুর বটতলা এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে।
পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে কায়েমপুর বটতলা এলাকার পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় কবির হোসেন নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ৩ আগষ্ট থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানিয়েছে কবির হোসেনের হার্টের সমস্যা ছিল। ধারনা করা হচ্ছে পুকুর পাড়ে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়ে পুকুরে পড়ে গেছেন। দুইদিন পর লাশ পানিতে ভেসে উঠেছে। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে।৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের টেটাযুদ্ধে আনোয়ার হোসেন (৫০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার উচিতপুরা ইউনিয়নের কাদিরদিয়া গ্রামে দুই দফা সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার হোসেন একই গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে এবং উচিতপুরা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাফরের বড় ভাই।স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, উচিতপুরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হানিফ ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাফর গ্রæপের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় হানিফ মেম্বার তার দলবল নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় বসত ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ফের হামলা চালানো হয়। এতে আনোয়ার নিহত হন। আহতদের একজনকে ঢাকায় বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।সংশ্লিষ্টদের মতে, নারায়ণগঞ্জে মাত্র ৬ দিনে এতগুলো অপঘাতে মৃত্যু আতংকিত করেছে স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন করোনার কারনে অপরাধ কমেছিলো অনেকাংশে। কিন্তু সবকিছু স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসতেই অপরাধীদের বীভৎস রূপও ফিরে এসেছে। খুব দ্রতই প্রশাসন কঠোর ভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে উদ্যোগ না নিলে নারায়ণগঞ্জে আবারো ছরিয়ে যেতে সন্ত্রাস নামক ভাইরাস।
No comments:
Post a Comment