ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর! বিচারের রায় কার্যকর হতে আরো কত বছর? - সদ্য সংবাদ
আজ বঙ্গাব্দ,

শিরোনাম

Thursday, August 20, 2020

ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর! বিচারের রায় কার্যকর হতে আরো কত বছর?


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২১ আগস্ট, বর্বর নৃশংস জঘন্য গ্রেনেড হামলা দিবস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কালো দিন। শোকবিহ্বল জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আজ শুক্রবার (২১ আগস্ট) ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী পালন করবে। দেড় দশক আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের এইদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

মূল টার্গেট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে হামলা চালানো হলেও অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। দলীয় নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমানসহ দলের ২৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারান। আহত হন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী। তাদের অনেকেই এখনও শরীরে স্প্রিন্টারের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি, ওই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল এই হামলার মূল উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্য পূরণে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নীলনকশায় সংঘটিত হয় গ্রেনেড হামলা। সেদিন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় দায়ের করা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটকও সাজানো হয়। তখন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াতসহ চার দলীয় জোটের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ? বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণে দেখা যায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তাতেই প্রকাশ্যে এই হামলা চালানো হয়েছিল।যা পরবর্তীতে আদালতের রায়েও উঠে এসেছে।

সারাদেশে হত্যা, খুন, গুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে তৎকালীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডেকেছিল আওয়ামী লীগ। পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশটি মুক্তাঙ্গনে পুলিশি বাধার কারণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ করে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য যখন শেষ, ঠিক সেই সময় আকস্মিক বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে শুরু করে গ্রেনেড। বিকট শব্দ, আর্তচিৎকার, দিশেহারা নেতাকর্মীদের ছোটাছুটিতে সমাবেশস্থল আচমকায় পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববর্ম তৈরি করে নিজেরা স্প্রিন্টার, গুলির আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন সেদিন।

মেয়র হানিফের মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্প্রিন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আওয়ামী লীগের ওই সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। আহত হন ৫ শতাধিক নেতাকর্মী।

বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় অন্য নিহতরা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসাহাক মিয়া।

মারাত্মক আহতদের মধ্যে আছেন- শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, প্রয়াত অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, এস এম কামাল হোসেন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, 

হামলার দীর্ঘ ১৪ বছর পর গত বছরের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত হামলার সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পালাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রায় ঘোষণার পর বিচারিক আদালতও পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘গ্রেনেড হামলা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস। রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস এ হামলা ঘটানো হয়েছিল।’

রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় রাজনৈতিক সমাবেশে এ ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই ভয়াল দিনটি স্মরণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত দেশের জনগণ ২১ আগস্ট দিনটিকে ২০০৪ সালের পর থেকে নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ও হতাহতদের স্মরণে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করে ।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দিবসটি স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এবার গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে ২১ আগস্ট শুক্রবার সকাল ৯টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদিতে পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করা করা হবে।

উল্লেখ্য, মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গ্রেনেড হামলার দিনটি স্মরণে সীমিত পরিসরে নানা কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে উপস্থিত থাকবেন। সকল কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করার জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।


এসএস/বি

No comments:

Post a Comment