নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুরের মা হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশুর ক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা শাহিন মিয়া বাদী হয়ে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
শাহিন মিয়া জানান, তার বাড়ি মদনপুর ইউনিয়নের চাপাতলি গ্রামে। তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মা হাসপাতালে একজন গাইনি চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা চলছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে প্রসবব্যথা উঠলে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ওই হাসপাতালে আসেন। এ সময় ডাক্তারের পরামর্শে আলট্রাসোনাগ্রামসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। ডাক্তার স্বাভাবিক ডেলিভারি হবে বলে আশ্বস্ত করলে তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুর ১টার দিকে শিশুটি জন্ম নেয়।
শাহীন মিয়া বলেন, ‘শিশুটি জন্মের পর বেশ কিছুক্ষণ হার্টবিট থাকলেও ডাক্তারের অবহেলার কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তেমন কোনও সরঞ্জামাদি নেই। আমার মতো আর কোনও বাবার সন্তান যেন এখানে এসে মারা না যায়।’ তিনি নবজাতকের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
তবে শিশুটির বাবার অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ফারুক হোসেন বলেন, ‘স্বাভাবিক ডেলিভারি হওয়ার পর শিশুটিকে এনআইসিওতে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা শিশুটিকে ঢাকা বা অন্য কোথাও নেওয়ার আগ্রহ দেখাননি। সে কারণে শিশুটি মারা যায়। আমাদের চিকিৎসার কোনও ত্রুটি ছিল না।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মা হাসপাতাল পরিচালনার ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য সিভিল সার্জন অফিসের লাইসেন্স এবং অনুমতিপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মালিক দেখাতে পারেননি। তবে হাসপাতালটির এমডি শেখ রুহুল আমিন দাবি করেন, সব কাগজপত্র আছে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মদনপুর মা হাসপাতালে একজন শিশু মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। থানায় যেহেতু মামলা হয়েছে, বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখবো। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, লাইসেন্স ও অনুমতিপত্র না থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন জানান, এ ঘটনায় নবজাতকের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে হাসপাতালের মালিকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment