সোনারগাঁয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত - সদ্য সংবাদ
আজ বঙ্গাব্দ,

শিরোনাম

Wednesday, December 14, 2022

সোনারগাঁয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন ও সোনারগাঁ উপজেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে সোনারগাঁ পৌরসভার চিলারবাগ এলাকায় বিজয় স্তম্ভে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও আলোচনা সভার মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়।



সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ান উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ - ৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া,

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম,

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইব্রাহীম, সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান সুমন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার সোহেল রানা ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরে তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে মোমবাতি উজ্জ্বলন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এন এম ইয়াছিনুল হাবিব তালুকদার ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম খোকন'র সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সোনারগাঁ থানার (ওসি তদন্ত) আহসান উল্লাহ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রধান, জেলা পরিষদ সদস্য আবু নাইম ইকবাল,কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা, উপজেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শেখ এনামূল হক বিদ্যুৎ, সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম ইমাম, সাধারণ সম্পাদক গোলজার হোসেন ভূঁইয়া,সাংগঠনিক শওকত ওসমান সরকার রিপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম,সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েতুল ইসলাম শিপন,সদস্য নির্মল সাহা,সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মোঃ কাইউম  সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিজয়স্তম্ভে মোমবাতি জ্বালিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসনের অফিসারবৃন্দ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ।

এসময়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেছেন,১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। বাঙ্গালী জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল।

শহীদ বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়ে যেতো। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মূল নায়ক মাঈনুদ্দিন চৌধুরী ও আশরাফ খানের ফাঁসির রায় হয়েছে। কিন্তু তারা বিদেশে রয়েছেন। অবিলম্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি । তাহলে বুদ্ধিজীবীদের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।



সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইন্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান মাসুম বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের একটি শোকাবহ দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শহীদ বুদ্ধিজীবীরা তাদের মেধা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দ্বারা স্বাধীন বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারতেন। কিন্তু ঘাতকের নির্মমতায় তারা সেটি পারেননি। আমি সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি । 

এসময় বক্তারা আরো বলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু'দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুদ্ধিজীবীদের নিথর দেহ। কারও শরীর বুলেটবিদ্ধ, কারও বা অমানুষিক নির্যাতনের চিহ্ন, ক্ষতবিক্ষত দেহ। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়িভুঁড়িও বের করে ফেলা হয়েছিল অনেকেরই। বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এসব বুদ্ধিজীবী নিজেদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকেও উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে।

১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের শিকারের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। 

পরে কৃতী এসব বুদ্ধিজীবীর তালিকাই তুলে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা শুরু হয়। আর এ অপকর্মের চূড়ান্ত নীলনকশারই বাস্তবায়ন ঘটে ১৪ ডিসেম্বর। তার পর থেকে ১৪ ডিসেম্বর দেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন হয়ে আসছে।


এসএস/বি ১৫ ডিসেম্বর 

No comments:

Post a Comment